Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কৃষির কোনো বিকল্প নেই

অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কৃষির
কোনো বিকল্প নেই
কৃষিবিদ শারমিনা শামিম
করোনার মতো অতিমারি সারা বিশ^কে যেন থামিয়ে দিয়েছিল চোখের পলকে। করোনার করাল থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিশ^ অর্থনীতির কাঠামো। উন্নত দেশ যেখানে খাদ্য উৎপাদন নিয়ে দুর্ভাবনা কাটিয়ে উঠতে হিমসিম খেয়ে যায়, সেখানে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলো অবস্থা শোচনীয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনা করোনা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলায় এক অনন্য ভূমিকা রেখেছে। তাই এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বর্তমানে বিশে^র কাছে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন এ দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে। আর সেই অনুপ্রেরণাকে সামনে রেখেই এদেশের আপামর জনগণ কাজে লেগে যায়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষিকাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেন খুলনার তেরখাদা উপজেলার শিক্ষিত সাহসী তরুণ শাকিল আহম্মেদ।
তেরখাদা উপজেলার পানতিতা গ্রামের ছেলে জনাব মো. শাকিল আহম্মেদ কর্মরত ছিলেন সাভারের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক মন্দায় চাকরি হারান তিনি। চাকরি হারিয়ে দিশাহারা শাকিল নতুন আলোর সন্ধান পান। কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে। তিনি গ্রামে ফিরে আসেন। বাড়িতে ফিরে দেখলেন বসতবাড়ির আশেপাশে প্রায় এক একর (১০০ শতাংশ) জমি অযতেœ অবহেলায় অনাবাদি পড়ে আছে। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই পতিত জমিতে গড়ে তুলবেন কৃষিখামার। চাকরিরত অবস্থায় জমানো অর্থ ব্যয় করে তিনি এ খামার তৈরির প্রস্তুতি নেন।
ধীরে ধীরে তিনি বসতবাড়ির জমিসহ আরো বিশ বিঘা জমি লিজ নেন এবং গড়ে তোলেন সমন্বিত মৎস্য ও কৃষি খামার। টেলিভিশনে প্রচারিত বিভিন্ন কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে চাকরিরত অবস্থায় কৃষিকাজের প্রতি আগ্রহ গড়ে ওঠে তার। তখন থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন এরকম একটি খামারের। কিন্তু বাড়িতে ফিরে তিনি দেখলেন একাজে প্রতিবন্ধকতা অনেক। তখন তিনি উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেন। তিনি অল্প দিনের মধ্যে বুঝতে পারলেন দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিকাজ এর প্রধান অন্তরায় লবণাক্ততা। সেইসাথে প্রতি বছরই রয়েছে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়, উপকূলীয় জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা। উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে তাই তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সম্ভাবনা হিসেবে কাজে লাগান। শুরু করেন চিংড়ি ও তেলাপিয়া মাছের চাষ। সেই সাথে ঘেরের চারিদিকে চওড়া পাড়ে করেন অফসিজন তরমুজ, গ্রীষ্মকালীন টমেটো ও আগাম শিমের চাষ। কিছু কিছু ঘেরের পাড়ে লাগান পেঁপে, থাই পেয়ারা, বলসুন্দরী কুল ও আপেল কুলের গাছ। এভাবে তিনি প্রায় পাঁচশটি পেয়ারা ও ছয়শটি পেঁপে গাছ লাগান। সবজি ও ফল বাগানে পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয় করে মাত্র আট মাসের ব্যবধানে তিনি প্রায় আট লক্ষ টাকা উপার্জন করেন। কৃষিকে আনুভূমিক ও উলম্বভাবে বৃদ্ধি করে এক জমি থেকে এক মৌসুমেই চার থেকে পাঁচটি ফসল উৎপাদন করেন। তিনি জানান, তার উৎপাদিত সবজি রাজধানীসহ খুলনার আশপাশের জেলাগুলোতে বিক্রি হয়ে থাকে। এসব সবজি ও মৌসুমি ফল উৎপাদনে তিনি জৈবসার ও জৈব বালাইনাশকের ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ঘেরের পাড়ে হওয়ায় রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের খুব বেশি সুযোগ থাকে না। এতে উৎপাদন খরচও তুলনামূলকভাবে কম পড়ে, অন্যদিকে বাজারমূল্য বেশি পাওয়া যায়। যখন গ্রামের অন্যান্য কৃষকেরা গতানুগতিক ফসল চাষ করে, তখন তিনি ব্যতিক্রমী ফসল চাষ করে অধিক বাজারমূল্য পেয়ে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষক ভাইয়েরা একই ফসল সকলেই চাষ করে। যার ফলে বাজারমূল্য বেশ কম পাওয়া যায়। একটু সচেতনভাবে ফসল নির্বাচন করা সম্ভব হলে উৎপাদন ব্যয় ও লাভ অনেকাংশে বেশি পাওয়া যায়। এ কাজে শাকিলের পাশে সহযোদ্ধা হিসাবে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করেছে উপজেলা কৃষি অফিস, তেরখাদা। উপজেলা কৃষি অফিসার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ কারিগরি পরামর্শ ও উপকরণ সহায়তা দিয়েছেন প্রয়োজন অনুযায়ী, সেই সাথে জুগিয়েছে মনোবল।
শুধু শাকিলই নয় খুলনায় ডুমুরিয়া উপজেলার মেহেদী হাসান, মামুন, হানিফ মোড়ল এর মত কৃষকেরা অফসিজন তরমুজ ও আগাম শিম চাষ করে দক্ষিণের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন। অফসিজন তরমুজ যেমন এখন ধরতে গেলে সারা বছরই পাওয়া যায়, এভাবেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অফসিজন তরমুজ ও আগাম শিম চাষ দক্ষিণাঞ্চলে। ঘেরের পাড়ে শিম চাষ করে লক্ষ টাকার স্বপ্ন বুনছেন অনেক চাষিই। ঘেরের পাড়ে সবজি চাষের জন্য পাড়কে তিন হাত চওড়া করা হয়।
চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, ঘেরের চওড়া পাড়ে বাঁশ ও নেটের তৈরি মাচায় বিঘার পর বিঘা জমিতে চাষ করা হচ্ছে আগাম জাতের শিম ও গ্রীষ্মকালীন শিম। গ্রীষ্মকালীন ও আগাম জাতের শিমের মধ্যে রয়েছে-আইরেট, ইপসা-১, ইপসা-২, বিইউ শিম-৪, বারি শিম-৩ ও ৭ এবং অটো শিম । তবে দক্ষিণাঞ্চলে ঘেরের পাড়ে স্থানীয় কৃষকেরা লালফুল ও বিস্কুট জাতের শিম বেশি চাষ করে থাকেন।
আগাম জাতের এ শিম বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে লাগানো হয়। ঘেরের পাড়টি ঘেরের মাটি তুলে তৈরি করা হয় বিধায় পাড়ের মাটি যথেষ্ট উর্বর হয়ে থাকে। কৃষকেরা এখানে কোন বাড়তি রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। তবে স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে এসব আগাম শিমের জমিতে।
ঘেরের পাড় ঘেষে বাঁশের কঞ্চি পুঁতে এর গায়ে কারেন্ট জাল ব্যবহার করে তৈরি করা হয় শিম গাছের লতার বাউনি। এই ধরনের শিমের চাষ করতে তেমন কোন রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করা হয় না। এখানে পোকামাকড় দমনের জন্য ফেরোমন ফাঁদ, আঠালো ফাঁদ, ছাই ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। ছত্রাকজনিত রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত ফুল ও পাতা হাত বাছাই করে মটিতে পুঁতে ফেলা হয়।
শিম চাষের জন্য তৈরি খাঁড়া মাচার পাশাপাশি ঘেরের জমিতে সমান্তরাল মাচা তৈরি করে একইসাথে করলা, লাউ, কুমড়া, অফসিজন তরমুজ প্রভৃতির আবাদ করা হয়ে থাকে।
ঘেরে যেহেতু মাছ চাষ হয়, তাই রাসায়নিক বিষ প্রয়োগের কোন সুযোগ থাকে না। শিম লাগানোর প্রায় দুই মাস পর থেকে শিম উত্তোলন করা যায়। প্রায় আট মাস পর্যন্ত শিম উত্তোলন করা সম্ভব।
বীজ ক্রয় ও মাদা প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে শিম উত্তোলন পর্যন্ত বিঘাপ্রতি মোট খরচ হয় আনুমানিক এক লক্ষ টাকা। তবে কৃষকদের মতে আট মাসে বিঘাপ্রতি প্রায় দশ লক্ষ টাকার শিম বিক্রি করা সম্ভব হয়। আগাম শিমের বাজার দর স্থানীয় পর্যায়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কখন আবার ১৪০-১৫০ টাকা করে বিক্রি করা হয়।
এ পদ্ধতিতে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা ঘেরের পাড়ের সামান্য জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে জৈব পদ্ধতিতে নিরাপদ ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। ঘেরের দু’পাড় জুড়ে যতদূর দৃষ্টি যায় সবুজের সমারোহ। এ যেন এক নান্দনিক দৃশ্য।
ঘেরের পাড়ে উৎপাদিত সবজি এর পুষ্টিগুণ
শিম আমিষ ও ক্যরোটিন সমৃদ্ধ আঁশজাতীয় সবজি। শিমের বিচিতে উচ্চমাত্রায় আমিষ রয়েছে। এছাড়া শিমের বিচি ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ভিটামিনযুক্ত। এ খাবারটি হাড়ের রোগ ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। শিম পরিপাকের জন্য ভালো আর দেহ ঠা-া রাখে। ব্যথা কমাতে ও রুচি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। শিম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে সহায়তা করে।
মিষ্টিকুমড়া ক্যারোটিন ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ একটি খাবার। রাতকানা ও ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। হার্ট এটাক ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিজ রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
লাউ চুল ভালো রাখতে, অনিদ্রা ও নার্ভের অসুখ সারাতে সাহায্য করে। করলা ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ একটি খাবার। এর রস বহুমূত্র, চর্মরোগ, বাত এবং হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
শসা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাবার। এটি নখ গঠনে সহায়তা করে। দেহের তাপমাত্রা কমায়। স্থূলতা কমাতে, হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। কিডনি ও পাকস্থলীর প্রদাহ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তরমুজ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি খাবার। লিভারের ফোলা ভাব কমাতে ও প্রস্রাবের জ¦ালা পোড়া রোধে সাহায্য করে।
(সূত্র : অসিত কুমার সাহা ও ড. প্রণয় বালা, পুষ্টিকথা, জুন ২০১৯)
প্রধানমন্ত্রীর উদাত্ব আহবানে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে এসেছে এদেশের তরুণসমাজ। অনেকেই আজকাল চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে। তাই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশ ও গুটি গুটি পায়ে উন্নতদেশে রূপান্তরিত হতে দেশের কৃষিজীবী মানুষের ভূমিকা অপরিসীম। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে বর্ধিত জনগোষ্ঠীর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পরিকল্পিত চাষাবাদের কোন বিকল্প নেই। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাটির স্বাস্থ্য ধরে রেখে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনারবাংলা গড়ে তোলা এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ নিয়েছে।

লেখক : আঞ্চলিক বেতার কৃষি অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খুলনা। মোবাইল নম্বর: ০১৭০৬৫৭৬৯২২, ই-মেইল :khulna@ais.go.bd

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon